বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। দেখুন ইসলাম অর্থ শান্তি । আর শান্তির পূর্ব শর্ত খাওয়া পরার টেনশন থেকে মুক্তি । তাই ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার উপর আপনাদের ওয়াজ নছিহত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্তই কাম্য । কারণ সুদের টাকার খাদ্য খেয়ে ইবাদত করলে তো তা কবুল হবে না । তাহলে আপনারা বলুন সুদের বাহিরে এখন পৃথিবীর কোন দেশের কোন অঞ্চলের কোন প্রতিষ্ঠান রয়েছে বা থাকলেও কয়টি রয়েছে ? তবে এতো ওয়াজ নছিহত করে ফল কতটুকু হবে ? আমরা তো সুদের গেজা খাচ্ছি । সুদ একটি মারাত্মক হারাম। আর হারাম খাদ্যে পরিপুষ্ট শরীরের দোয়া ও ইবাদাত কবুল হবে না ও তা জাহান্নামের উপযুক্ত হবে। ইহা রাসূল (সা:) বলেছেন। এছাড়া বর্তমান বিশ্বের মানুষদের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য আর উন্নতির মূল সোপান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই যে, এ দুটি বিষয়ে আপনাদের ওয়াজ নছিহত এবং সক্রিয় প্রচেষ্টা প্রায় নেই বললেই চলে । অতএব আপনারা কি মানুষের প্রয়োজনীয় এ দুটি বিষয়কে উপেক্ষা করছেন ? মাইন্ড করবেন না বরং আপনি নিজকে নিজে চিন্তা করুন, জীবনে বহুত ওয়াজ নছিহত করেছেন, মানব ও সমাজসেবা মুলক কর্মকাণ্ড করেছেন । কিন্তু মানুষের অতীব প্রয়োজনীয় এ দুটি বিষয়ে আপনার অবদান কতটুকু? সুদ থেকে মুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা না করে আপনার ওয়াজ শুনে আমার এবং আমার ভাইদের লাভ কতটুকু হবে বলুন ? এভাবে এ কথাটি আমি আপনাদেরকে বলতাম না । দেখুন আপনারা বিচার করুন । গত কয়েক মাস আগে আমার কাছে আমারই বন্ধু সম প্রতিবেশী লোন নিতে এসে উত্তেজিত হয়ে সামনাসামনি লোনের চুক্তি লেখার জন্য প্রদত্ত স্ট্যাম্প ( ৩০০টাকার) ছিঁড়ে ফেলেছে । এরপর আমি তার জ্ঞানের অভাব দেখতে পেয়ে আমার এ অফিসের দু'পাশের মসজিদের দু'খতিব মহোদয়কে অনুরোধ করলাম, আপনারা বাকিতে পণ্য কিনে কিস্তিতে পরিশোধ, অর্থাৎ লোন প্রদান এ বিষয়ে একটি জ্ঞান জুমার বয়ানের ( যেহেতু এ দেশে জুমার বয়ান করা হয়) মাধ্যমে আমাদেরকে প্রদান করবেন (অনুরোধক্রমে) । যাতে ইসলামী অর্থনীতির বিষয়ে কিছু জ্ঞান আমরা প্রাপ্ত হই। যাতে আমাদের মাঝে ঝগড়া বিবাদ এর পরিমাণ কিছুটা হলেও কমে। কারণ, লোন দেয়ার সময় আমাকে লোন গ্রহিতা বিভিন্ন ভাবে পেরেশান করে। যেমন, ওরা আমাকে বলে, টাকা দিচ্ছেন, টাকা নিবেন; এতো ভাউচার খুঁজেন কেন? মাল দেখে আপনি কি করবেন; আমি কি চুরি করছি? আপনি দেখেন না, আমি দোকান করছি। দোকানে অনেক মাল। কিন্তু আমি কোন মালটি তার নিকট বাকিতে বিক্রি বাবদ, মাল কিনে আনার জন্য টাকা দিচ্ছি এবং সে মালটিই আমি দেখতে চাই; ইসলামী অর্থনীতি অনুযায়ী আমার কাছে সন্দেহ হলে, তবে আমাকে আমার মাল দেখাতে হবে এবং আমিও দেখতে হবে বা স্বাভাবিক ভাবেই মালটি দেখা আমার জন্য অধিক উত্তম; মালের ভাউচার প্রদান করলেও। এ বিষয়টি আমি তাদেরকে বুঝাতে পারির না। উল্টা তারা আমাকে বলে, তাহলে আপনি কি আমাদের জন্য সহজ নিয়ম চালু করছেন, না প্যাঁচাল ফারছেন? কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমি অনুরোধ করার প্রায় আড়াই মাস পার হলেও আপনারা কেউই এ বিষয়ে কোনো বয়ান করেন নি এবং সাধারণত আপনারা এ ধরনের অর্থনৈতিক বিষয়ে তেমন কোন বয়ান বা প্রদক্ষেপ নেন না। আর মানুষ গুলো মনে করে সুদ বিহীন অর্থ ব্যবস্থা সম্ভব নয় অথবা একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং পরোক্ষভাবে ইসলামের এ বিধান সমূহকে জটিল, কঠিন ও মানুষের জন্য কষ্ট দায়ক আইন ও ইসলামকে জটিল ও কঠিন ধর্ম হিসেবে মানুষ গুলো যার যার মতো করে বুঝে নেয় । ইসলাম সম্পর্কে মানুষের এ অজ্ঞতার বিষয়ে আপনারা কি একটুও দায়ী নয়? আপনাদেরকে আলেম হওয়ার তাওফিক কে দিয়েছে? এবং কেন দিয়েছে? আপনারা কি পারেন না, লোন দেয়ার সময় কেন আমরা ভাউচার খুঁজি? কেন আমরা মাল খুঁজি? বিদেশের ভিসা টিকেটের জন্য, ভাড়া বা লেবারের মুজুরির জন্য, কেন আমরা লোন দিতে পারি না? ইত্যাদি বিষয় গুলো বুঝিয়ে দিতে? যা খেয়ে আমরা জীবন ধারন করি, মানুষ বেঁচে থাকে; আর সে বিষয়টিকে পিউর করতে এবং সুদের মতো একটি মারাত্মক গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে মানুষ কিভাবে সুদমুক্ত ঋণ পাবে ( লোন, এটি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, একে অস্বীকার করা মানে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা), সে বিষয়টি অন্তত আপনাদের জুমার বয়ান (যেহেতু এ দেশে জুমার বয়ান করা হয়) সহ বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে থাকবে না, এর পিছনে কোন যুক্তি আমি খুঁজে পাই না। তাই আমি অনুরোধ করবো, এ বিষয়টিকে আপনারা প্রাধান্য দিয়ে এবং বিভিন্ন চেষ্টা তদবীরের মাধ্যমে মানুষকে হালাল ভাবে খাদ্য খাওয়াতে সচেষ্ট হবেন। ইহা আপনাদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ। আপনারা যদি লোনের এ বিষয় সহ ইসলামী অর্থনীতি সম্পর্কে আপনাদের ওয়াজ নছিহতে বলতেন বা সাধ্যমত সহযোগিতা করতেন তাহলে আমাদেরকে আজ এত কষ্ট বা মনোমালিন্য করতে হতো না। দেখুন আজও সমাজের প্রায় সব গুলো মানুষ ইসলামী লোন নেয়ার সময় মাল দেখানো, ভাউচার প্রদান এসবকে শুধুমাত্র ফরমালিটিই মনে করে । তাই আপনাদের নিকট আমার উদাত্ত আহ্বান, আপনারা এ বিষয় গুলো সহ ইসলামী অর্থনীতির অন্যান্য দিক মানুষের সামনে সহজ সরল ভাবে তুলে ধরবেন । কারণ খাদ্যই যদি হালাল না হয়, তাহলে (আপনাদের এ বিষয়ক ওয়াজ ব্যতিরেকে) অন্যান্য ওয়াজ নছিহতে উল্লেখ করার মতো কোন ফল আসবে বলে আমার মনে হয় না।আর তাই আপনারা যে যেভাবে পারেন সাধ্যমতো ওয়াজ-নছিহত, প্রবন্ধ-নিবন্ধ এবং বাস্তবে ঋণ প্রদান বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গড়ে ও সে প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র অনলাইন ও অফলাইন উভয় ভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করলে, আমরা যারা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ঋণ প্রদান করতে গিয়ে বিভিন্ন মুখি সমস্যায় পড়ছি, আমাদের প্রভূত উপকার হতো। একই ভাবে আপনাদের জ্ঞান প্রদান ও সাপোটিং এর কারণে অনেকেই ইসলাম ভিত্তিক ঋণ প্রদান ও অন্যান্য ব্যবসায়িক ইসলামিক প্রতিষ্ঠান গড়ার সাহস, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা পেতো। অপরদিকে ঋণ গ্রহিতা গণও ইসলামী জ্ঞান ও আপনাদের সহযোগিতা পেয়ে ইসলামী নিয়মেই ঋণ গ্রহণকে সহজ মনে করতো ও বিষয়টিকে মেনে নিতো। আর এভাবে বিশ্বের অর্থনীতির চাকা একটু হলেও ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত হতো। আর কিছু না হলেও ইসলামী অর্থনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ইসলামকে সহজ ও শান্তিময় ধর্ম হিসেবে বিশ্ববাসির সামনে উপস্থাপন করা, ইহা আপনাদের দায়িত্ব। বিশ্বের সকল প্রান্তের আলেম সমাজের প্রতি এ আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং পরবর্তীতে ইসলামী অর্থনীতির অন্যকোন দিক নিয়ে আপনাদের সামনে আবার হাজির হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে ও আমার এ লিখা ও ভিডিও’র ভূল-ত্রুটি সম্পর্কে কমেন্টস দিয়ে সংশোধিত করার লক্ষ্যে সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দেয়ার অনুরোধ করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। সকলে সুখে থাকুন। সুন্দর থাকুন ও সুস্থ থাকুন। করোনার মতো এ মহামারি থেকে মহান রব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে মাফ করুক। গুনাহ মুক্ত, কর্মময় ও সাফল্যময় হোক আমাদের সকলের স্বপ্নময় ভবিষ্যত। আল্লাহ হাফেজ।
নিবেদক,
দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনায়-
মুহাম্মদ আরিফ উল্যাহ,
প্রতিষ্ঠাতা: বন্ধন ফাউন্ডেশন
গোবিন্দপুর, হাজীর বাজার, ফেনী সদর, ফেনী।
0 Comments