Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

কবীরা গুনাহ সমূহের বিবরণ, পাঠ-2 (ধারাবাহিক, লিখিত)

 

কবীরা গুনাহ সমূহের বিবরণপাঠ-2  (ধারাবাহিক)

(পূর্ব প্রকাশের পর থেকে)

3. মানুষ হত্যা করা: আল্লাহু তায়ালা ঘোষণা করেন,“ যে লোক ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন বিশ্বাসী মুমিনকে খুন করবেতার পরিণাম ফল চিরকালীন দোযখবাস। আল্লাহু তায়ালা তারপ্রতি ক্ষুদ্ধ হনতাকে অভিশাপ দেন এবং তার জন্য ভয়ংকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।”--(সূরা আননিসা৯৩)

 বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন, “যে লোক কোন অমুসলিম নাগরিককে খুন করবেসে বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে নাযদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের পথের দূর থেকে পাওয়া যাবে।--(বোখারী)

4. জাদু টোনা করা:   প্রসঙ্গে আল্লাহু তায়ালা ঘোষণা করেন, “ কিন্তু শয়তানেরাই কুফরীতে রত হয়ে মানুষকে যাদু শিক্ষা দিতো” --(সূরা আল বাকারা১০২) দেখুন যাদুকরকে এখানে শয়তানের সাথে তুলনা করা হয়েছে  ইহা শয়তানের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া  জাদুকর সর্বাবস্থায় কুফরীতে লিপ্ত থাকে। সে জীবনের প্রতিটা সময় কবীরা গুনাহ  কূফরীর মধ্যে নিমজ্জিত অবস্থায় দিনাতিপাত করে।

 বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন, “ যাদুকরের নির্ধারিত শাস্তি তরবারি দিয়ে তাকে হত্যা করা।--(তিরমিযী) যাদুকরের প্রতি শরিয়তের শাস্তি হলো প্রাণদন্ড।

তবে  প্রসঙ্গে ইমাম খাত্তাবী (:) বলেনপবিত্র কোরআনের আয়াত অথবা আল্লাহু তায়ালার নামে তাবিজঝাড়-ফুঁক জায়েজ। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা:) হযরত হাসান (রা:)  হযরত হুসাইনকে (রা:) আল্লাহু তায়ালার কালামের দ্বারা ঝাড়-ফুঁক দিয়েছিলেন বলে প্রমাণিত রয়েছে।

প্রাসঙ্গিক জ্ঞাতব্যতবে এর মাধ্যমে শুধু মোটা অংকের অর্থ কিভাবে আদায় করা যায়উদ্দেশ্য  রকম হলে , শুধু মনগড়া ব্যক্তিগত অর্থের ধান্দা হলে (কোন উদ্দেশ্য প্রণোদিত  মিথ্যা বই দেখিয়ে হোক বা নিজের কোন মিথ্যা কারিশমা দেখিয়ে হোক) ,  তাহলে অবশ্যই ইহা ঝুলুম  কবীরা গুনাহের শামিল হবে। মানুষের প্রতিই যার মুহাব্বত থাকবে নাআল্লাহু তায়ালার ইবাদাতের প্রতিই যার পূর্ণ আনুগত্য থাকবে নাসে কখনো আল্লাহু তায়ালার কালাম  রাসূলের (সা:) হাদিস মোতাবেক কোন চিকিৎসক হতে পারে না। সে আসলে শুধু অর্থ লোভী ছাড়া আর কিছু নয়।  ধরনের লোকগুলো উপর দিয়ে যতই ইসলামের লেবাসধারী হোকঅথবা কোন আলেম (মাদ্রাসায় পড়লেই পরবর্তী জীবনে মানুষ তাকে আলেম বলে পরিচয় দেয়কিন্তু  আলেমের আমল যদি জাহেল থেকেও খারাপ হয়তাহলেওতো তাকে মানুষ আলেম বলবেতাই সঙ্গত কারণেই  শব্দটি ব্যবহার করেছিআমায় মাফ করবেনহলেওআপনারা এদের কাছে যাবেন না। মনে রাখবেনরোগ-শোক এগুলো আপনার প্রতি মহান রবের পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু নয় (শাস্তি স্বরুপ হলেওএবং  পরীক্ষা হয়তো আপনার জন্য সম্মানেরই কারণ হতে পারেযদি আপনি মুমেন হন। তাই বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নিবেন। এছাড়া আপনাকে আরো স্মরণ রাখতে হবে যে,  পবিত্র কুরআন শরীফ যেমন একজন আমেলের বা আমলকারীর সাওয়াবের উচিলা হতে পারেঠিক তেমনি এর বদ-আমলকারীর জন্য সমপরিমাণে ইহা কঠিন গুনাহ  জাহান্নামের কারণও হতে পারে। অতএব  ধরনের লেবাসধারী মুসলিম আমেলের কোরআন হাদিস দ্বারা আপনি কখনো সুস্থ হবেন বলে মনে হয় না। আর যদি  ধরনের লোকদের তদবীরে আপনি সুস্থ হনও বা আপনার উপকার হয়ওতাহলে তা হয়তো আপনার প্রতি মহান রবের পরীক্ষায় অনুতীর্ণেরই পরিচয় বহন করবে। তাই  ধরনের ধান্দাবাজদের জ্বীন আছেভূত আছেতাবিজ আছে বা আপনাকে বান মেরেছে জাতীয় কথায় কান না দিয়ে বা সমাজের অশিক্ষিত বা কূসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের ভূল বোঝানোয় ভ্রূক্ষেপ না করে বুঝে-শুনে সার্টিফাইড ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। আপনি সমাজের দিকে একটু পর্যবেক্ষণ করলেই দেখতে পাবেনতাবিজ-টোনাবানজ্বীন-ভূত এগুলো শুধুমাত্র অনগ্রসরগরীব  অশিক্ষীত মানুষেদের কাছেই বেশীশিক্ষীতধনী  ফরওয়ার্ড মানুষদের কাছে এসব তেমন একটা নেই বললেই চলে। কিন্তু কেন এমনটি হবেজ্বীন-ভূত কি এদেরকে চোখে দেখে নাশুধু অশিক্ষিত আর গরীব শ্রেণীর লোকদেরকে চোখে দেখে!! এর কারণ কীআমি বলছি না যে মানুষজ্বীন  মানুষের যাদুকূ-দৃষ্টি বা তাবিজ-তুমার দ্বারা রোগাক্রান্ত হয় না বা অসুবিধায় পড়ে না। আমি শুধু বলছিলামএকটু বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নিতে  দৈনন্দিন প্রয়োজনে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করতে বা করাতে।  সমাজ থেকে আমি যা বুঝতে পেরেছিযারা জ্বীন আছেভূত আছেতাবিজ তুলতে হবেবান কাটতে হবে (হুজুর এবং খোনার-বদ্য সহ) ;  জাতীয় কথা বলেএদের মধ্যকার প্রতি হাজারে হয়তো একজন সহীহ থাকতে পারেবাকী ৯৯৯ জনই ধান্দাবাজহয়তো ধান্দাবাজদের সংখ্যা  পরিসংখ্যাণেও আসবে না।  বিষয়ে ধান্দাবাজ যে এত বেশি রয়েছে  দেশেআপনাদেরকে বিশেষ করে একটা অনুরোধ করি ধরনের মানষিক রোগীদেরকে গুণীনবৈধ্য আর অর্থ লোভী হুজুর দিয়ে আর কষ্ট দিবেন নাএমণিতেই  সমাজের নির্যাতন সহে  রোগীদেরকে জীবন-যাপন করতে হয় অথবা  সমাজেরই নির্যাতন আর অপমাণেই এদের অনেককে হয়তো  রোগী হতে হয়েছিলো!

5. নামাজে অলসতা করা: রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “ মুমিন  কাফেরের মধ্যে ব্যবধান হচ্ছে নামাজ ত্যাগ করা।” মহান আল্লাহু তায়ালা বলেনসুতরাং দুর্ভোগ সেসব নামাজীর জন্যযারা তাদের নামাজের ব্যাপারে উদাসীন।--(সূরা মাউন), ৫।  প্রসঙ্গে আল্লাহু তায়ালার রাসূল (সা:) বলেনতোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখেছসেভাবে নামাজ পড়। আল্লাহু তায়ালা আরো বলেনতোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।--(আল-কোরআন:৪৩) দেখুন রাসূলুল্লাহ (সা:) এর মতো নামাজ পড়তে হলে এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করতে হলে আপনাকে অবশ্যই জামাতের সাথে নামাজ পড়তে হবেএর কোনই বিকল্প নাই। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা:)  তাঁর সাহাবীগণ (সা:) সারা জীবন জামাতের সহিত নামাজ পড়েছেন। তাই নামাজের মতো নামাজ পড়ছি কথা বলে ঘরে একাকী নামাজ পড়ার কোনই সুযোগ নাই। সম্মানীত নামাজীএকাকী ঘরে নামাজ পড়েনিজকে হয়ত নামাজের মতো নামাজী হিসেবে মনে করেনআপনারা যদি মসজিদে নাই যাবেনতাহলে দয়া করে আমাকে বলতে পারেন সমাজে মসজিদের কী প্রয়োজন ছিলোকেন প্রত্যেক সমাজে এভাবে মসজিদ নির্মাণ করা হয়আর প্রত্যেক নামাজে এভাবে কেন আজান দেয়া হয়জনাবআপনি আজানের কী উত্তর দেননামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করাইহা কী আপনার জন্য আযানের উত্তর ছিলো নাতাই আমার অনুরোধএখনো তাওবা করেনমসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ুন। প্লিজ বিনা ওজরে ঘরে নামাজ পড়েনামাজে অলসতার কবীরা গুনাহে লিপ্ত থাকবেন না। আপনার দেখায় সমাজের বাকী দশ জন লোক হয় ভালো হবেনয় খারাপ হবে এবং এর গুনাহ বা সাওয়াবের ভাগ আপনাকেই বহন করতে হবে।  বিষয়ে  রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “ আমার ইচ্ছা হয়নামাজের নির্দেশ জারি করিআর এক লোকের ইমামতে নামাজের জামাত শুরু হোকঅনন্তর আমি শুকনো লাকড়ী বহনকারী একদল লোক নিয়ে  লোকদের  বাড়ীতে গিয়ে তাদের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেইযারা জামাতে শামিল হয়নি।--(বোখারী  মুসলিম) হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “ আজান শোনার পর কোন ওযর না থাকা সত্ত্বেও যে লোক নামাজের জামাতে শামিল হয় নাঘরে বসে একাকী পড়েতার নামাজ নামাজের মত করে মঞ্জর হবে না। যেখানে ওযর বলতে ভয়  রোগকে বুঝায়।--(আবু দাউদইবনে হেব্বান  ইবনে মাজা) অতএবরাসূলুল্লাহ (সা:) এর মত (অর্থাৎ রুকু-সেজদা ঠিকমত করেসময় মোতাবেক জামাতের সাথে নামাজ আদায় না করা একটি অনেক বড় এবং কঠিন  ভয়ানক কবীরা গুনাহ্কারণ এতে নামাজে অলসতার বিষয়টিই প্রমাণিত হয়। যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি যোগ্য  কবীরা গুনাহটি কুরআন  হাদিস দ্বারা সু-স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত।

6. যাকাত প্রদান না করা: আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “  ‍মুশরিকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগযারা যাকাত দেয় না।”--(সূরা হা-মীম সিজদা৬৭) লক্ষ্যকরুনএখানে যারা যাকাত দেয় নাতাদেরকে মুশরিকদের সাথেমানে বেঈমানদের সাথে তুলনা করা হয়েছে।  হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “সর্বপ্রথম তিন প্রকারের লোক জাহান্নামে যাবে, (সৈরচারী অর্থাৎ শক্তির বলে ক্ষমতা দখলকারী শাসক। (যাকাত অনাদায়কারী সম্পদশালী ব্যক্তি। এবং (দাম্ভিক দরিদ্র।”--(ইবনে খুযাইমা  ইবনে হেব্বান) আল কুরআন  আল হাদিস দ্বারা  কথা অকাট্যরুপে প্রমাণিত যেহিসেব করে যাকাত প্রদান না করা  একটি অতি বড় শাস্তিযোগ্য কবীরা গুনাহ। (চলবে)

Post a Comment

0 Comments