ঈমানের শাখা-প্রশাখার বিবরণ, পাঠ-2
(ধারাবাহিক) ঈমানের 77 টি শাখা রয়েছে। একজন মুমেনকে খাঁটি মুসলমান হতে হলে এ সাতাত্তরটি শাখার সবগুলো শাখায় 100% বিশ্বাস করতে হবে এবং মেনে নিতে হবে ও এ সবগুলোতে পরিপূর্ণ আমল করতে হবে। আর আপনারা এতে আমল করবেন এ উদ্দেশ্যে এ সাতাত্তরটি শাখার সবগুলোর নাম ও প্রয়োজনীয় বিবরণ ধারাবাহিক ভাবে নিম্নে পেশ করলাম। আশা করি এ প্রবন্ধটি সহ এ সংশ্লিষ্ট সবগুলো প্রবন্ধ পড়বেন ও এ সম্পর্কিত সবগুলো ভিডিও দেখবেন,(যা এ ওয়েবসাইটে রয়েছে) এবং মেনে চলবেন-
(পূর্ব প্রকাশের পর থেকে)
36. আল্লাহু তা’য়ালার যিকির করা।
37. বেহুদা কথা হতে এবং এ জাতীয় গুনাহ হতে যেমন-মিথ্যা, পরনিন্দা, গীবত-চোগলখুরী, গালি-গালাছ, বদ্-দোয়া করা, লা’নত দেয়া, অভিশাপ দেয়া, গান গাওয়া, গান শোনা ইত্যাদি হতে বেঁচে থাকা এবং সদা সত্য কথা বলা।
38. ওযু-গোসল করা, কাপড় পাক-ছাফ রাখা।
39. নামাযের পাবন্দ থাকা। অর্থাৎ সময় মতো সুন্নাত মোতাবেক জামাতে নামাজ আদায় করা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে নামাজ প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট থাকা।
40. হিসাব মোতাবেক স্বীয় সম্পদের যাকাত ও ছদকা-ফেতরা দেয়া।
41. রমজান মাসের সবগুলো রোজা রাখা।
42. সামর্থ হওয়া মাত্রই হজ্জ্ব করা।
43. রমজানের শেষ দশ দিন এতেকাফ করা।
44. যে সংসর্গে বা দেশে থেকে ঈমান রক্ষা ও ইসলাম ধর্ম পালন করা যায় না, সেই সংসর্গ এবং সেই দেশ পরিত্যাগ করে হিজরত করা।
45. আল্লাহু তা’য়ালার নামে মান্নত মানিলে তা পুরা করা।
46. আল্লাহু তা’য়ালার নাম নিয়ে কোন কাজের জন্য কসম করলে, যদি সে কাজ গোনাহের কাজ না হয়, তবে তা পূর্ণ করা।
47. আল্লাহু তা’য়ালার নামে কসম খেয়ে ভঙ্গ করলে তার কাফ্ফারা দেয়া।
48. ছতর ঢেকে রাখা (পুরুষের ছতর নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। স্ত্রী লোকের ছতর মাথা হতে পা পর্যন্ত)।
49. কোরবানী করা।
50. মৃত ব্যক্তির কাফন-দাপন করা।
51. ঋণ পরিশোধ করা।
52. কাজ-কারবারে কাউকে ধোঁকা না দেয়া, যেমন-মাপে কম দেয়া, আনার সময় বেশি মেপে আনা, ঘুষ খাওয়া, সুদ দেয়া নেয়া, ইত্যাদি শরা’র বরখেলাপ কার্য করা।
53. সত্য সাক্ষ্য গোপন না করা।
54. কামরিপু প্রবল হলে বিবাহ করা।
55. অধীনস্থ স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, চাকর-নওকর প্রভৃতির হক আদায় করা।
56. মা-বাপকে শান্তিতে রাখতে সচেষ্ট হওয়া।
57. সন্তানের লালন-পালন করা (তাদেরকে আদব-কায়দা, ধর্মজ্ঞান এবং হালালভাবে দুনিয়ার জীবন-যাপনের সদুপায় শিক্ষা দেয়া)।
58. ভাই-বেরাদর, বোন-ভাগ্নে, জাতি-কুটম্ব, পাড়া-প্রতিবেশী ইত্যাদির সঙ্গে অসদ্ব্যবহার না করা, অর্থাৎ প্রত্যেকের হক আদায় করা।
59. (চাকর-নওকর হলে) মনিবের তাবেদারি করা।
60. ন্যায় বিচার করা।
61. মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে একতা ভঙ্গ না করা। অর্থাৎ ফরজ কাজের মধ্যেতো একতা ভঙ্গ করা যাবেই না; মোবাহ্ কাজের মধ্যেও একতা ভঙ্গ না করা।
62. মুসলমান বাদশা এবং মুসলমান আমিরের (নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির) আদেশ পালন করা। অবশ্য আমিরের আদেশ যদি শরীয়তের হুকুমের বিপরীত হয়, তবে সে আদেশ পালন করা যাবে না।
63. ঝগড়া-বিবাদ মীমাংশা করে দেয়া।
64. সৎ কাজে সাহায্য করা।
65. সৎ কাজে আদেশ, বদ কাজে নিষেধ করা।
66. ইসলামি হুকুমত কায়েম হলে, তাহলে প্রশাসনিক ভাবে শরীয়ত অনুযায়ী শাস্তির বিধান সমূহ বাস্তবায়ন করা। যেমন-কেহ চুরি করলে তার হাত কেটে দিতে হবে। যেনা করলে ছঙ্গেছার করতে হবে অথবা একশত কোড়া লাগাতে হবে। মিথ্যা তোহমত লাগালে আশি কোড়া লাগাতে হবে। মদ্যপান করলে আশি কোড়া লাগাতে হবে। ডকাতি করলে তার হাত-পা কেটে দিতে হবে। খুনের বদলে খুন কেছাছ করতে হবে। প্রজা বিধর্মী হলেও তার প্রতি অন্যায় ব্যবহার করা যাবে না। আর নিজ দেশে ইসলামি হুকুমত না থাকলে তাহলে নিয়ম অনুযায়ী ইসলামি হুকুমতের জন্য চেষ্টা, তদবীর করতে হবে ও মহান রবের নিকট দোয়া করতে হবে।
67. প্রয়োজন হলে ইসলামের শত্রুর বিরুদ্ধে জেহাদ করা।
68. কারো আমানত কাছে থাকলে (রীতিমতো) তার হেফাজত করা এবং সময় মতো তার জিনিস তাকে ফেরত দেয়া।
69. অভাবগ্রস্থ লোক ধার চাইলে তাকে ধার দেয়া।
70. পড়শীকে সম্মান ও সহানুভূতি করা ( কোন পড়শী কষ্ট দিলে তা সহ্য করা, তার বিপদ-আপদ ও বালা মুছিবতের সময় তাকে সাহায্য করা ও সম-বেদনা প্রকাশ করা)।
71. হালাল উপায়ে হালাল রুজি উপার্জন করা।
72. শরীয়তের বিধি অনুযায়ী খরচ করা।
73. মুসলমান ভাইকে দেখিলে চেনা হউক বা অচেনা হউক তাকে “আসসালামু আলাইকুম” বলে সালাম দেয়া ও কোন মুসলমান সালাম করলে “ওয়াআলাইকুমুস সসালাম” বলে তার জবাব দেয়া।
74. কোন মুসলমান হাঁচি দিতে শুনিলে “আলহামদুলিল্লাহ” বলা এবং হাঁচি দাতা প্রতি উত্তরে “ইয়ারহামুকাল্লাহ” বলে এর জবাব দেয়া।
75. অনর্থক কাকেও কষ্ট না দেয়া।
76. খেলাপে শ’রা বা নাজায়েজ খেলাধুলা বা রং তামাশা হতে বেঁচে থাকা।
77. রাস্তার মধ্যে কোন কাঁটা বা ইট-পাথর ইত্যাদি কোন কষ্টদায়ক জিনিস থাকলে তা সরিয়ে ফেলা।
এ সাতাত্তর প্রকার কাজ সম্পূর্ণ আদায় করতে পারলে ইনশা’আল্লাহু তা’য়ালা আপনার ঈমান পূর্ণ হবে। এর একটি কাজও বাকি থাকলে ঈমান নাকেছ বা অসম্পূর্ণ থাকবে।
0 Comments